মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১২:২৯ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
মার্কিন পতাকা নামিয়ে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে উড়লো ফিলিস্তিনি পতাকা! বিএনপি সাংগঠনিকভাবে আরও দুর্বল হচ্ছে: ওবায়দুল কাদের বিষয়টি আদালতেই সুরাহার চেষ্টা করব, হাইকোর্টের নির্দেশনা নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী গাজার ভবিষ্যত নিয়ে আলোচনা করতে সৌদিতে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী দেশের সর্বোচ্চ ৪৩ ডিগ্রি তাপমাত্রা রেকর্ড চুয়াডাঙ্গায় দেশ থেকে আইনের শাসন উধাও হয়ে গেছে : মির্জা ফখরুল স্বর্ণের দাম ভরিতে কমলো ১১৫৫ টাকা তীব্র তাপপ্রবাহ : স্কুল-মাদরাসা বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বন্ধ রাখতে নির্দেশ হাইকোর্টের মঙ্গলবারও ঢাকাসহ ২৭ জেলায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যাঞ্চলে টর্নেডোর আঘাতে নিহত ৫
ইউপির ট্রেড লাইসেন্সে বছরে শতকোটি টাকার কাজ

ইউপির ট্রেড লাইসেন্সে বছরে শতকোটি টাকার কাজ

স্বদেশ ডেস্ক:

ট্রেড লাইসেন্সের বয়স মাত্র এক মাস। এ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ছিল না স্বাস্থ্য খাতে কাজের পূর্ব অভিজ্ঞতা। এমন একটি প্রতিষ্ঠানকে সম্প্রতি ২৯ কোটি ৭০ লাখ টাকার করোনা পরীক্ষার কিট সরবরাহের কার্যাদেশ দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সেন্ট্রাল মেডিক্যাল স্টোর ডিপো বা কেন্দ্রীয় ঔষধাগার। এর আগে আরও তিনটি টেন্ডারে করোনা পরীক্ষার কিট সরবরাহের কাজ পায় প্রতিষ্ঠানটি। এ ঘটনায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, কোনো ধরনের অভিজ্ঞতা ছাড়া এ ধরনের একটি স্পর্শকাতর সরঞ্জাম সরবরাহের দায়িত্ব প্রদান রিতিমতো বিস্ময়কর।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা ইউনিয়ন পরিষদ থেকে গত ৭ জুলাই ‘জিএস বায়োটেক’ নামের বিপরীতে একটি ট্রেড লাইসেন্স ইস্যু করা হয়। ব্যবসার ধরন হিসাবে যেখানে উল্লেখ করা হয়েছে মেডিক্যাল ইকুইপমেন্ট ও মেডিক্যাল প্রডাক্ট আমদানিকারক ও সরবরাহকারী। স্বত্বাধিকারীর নাম সৈকত সাহা। প্রতিষ্ঠানটি ২০২০ সালের নভেম্বরে ৮ কোটি ২৫ লাখ টাকার একটি কাজ পায়, তখন কার্যাদেশে লেখা ছিল ‘জিএস বায়োটেক, সিস্টার কনসার্ন অব জিএস গার্মেন্টস’।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, প্রতিষ্ঠানটি দীর্ঘদিন গার্মেন্টস ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। কিন্তু গত বছরের ৩ জুন সিএমএসডির প্রশাসনে পরিবর্তন এলে তারা স্বাস্থ্যের মতো একটি সংবেদনশীল খাতের ঠিকাদারি শুরু করে। কোনো ধরনের অভিজ্ঞতা ছাড়াই এ পর্যন্ত প্রায় ১০০ কোটি টাকার আরটিপিসিআর টেস্ট কিট, পিপিইসহ বিভিন্ন সরঞ্জামাদির কাজ করেছেন। প্রাপ্ত তথ্যে দেখা গেছে, প্রায় ১ বছর সিএমএসডিতে কিটসহ অন্যান্য মালামাল সরবরাহ করা হয়েছে জিএস গার্মেন্টসের সিস্টার কনসার্ন হিসেবে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, সরকারি সরবরাহ কাজে কোনো প্রতিষ্ঠানকে যুক্ত করার ক্ষেত্রে তাদের অভিজ্ঞতার বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে মূল্যায়ন করা হয়ে থাকে। তবে নতুন লাইসেন্সধারী প্রতিষ্ঠান জিএস বায়োটেকের করোনা কিটের রিয়েজেন্ট নিয়ে কাজ করার কোনো অভিজ্ঞতাই নেই। প্রতিষ্ঠানটি সরাসরি গার্মেন্টস ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। এর আগেও প্রতিষ্ঠানটি একই পদ্ধতিতে পারসোনাল প্রটেকটিভ ইকুইপমেন্ট (পিপিই) ও আরটিপিসিআর কিট সরবরাহ করেছে।

এমন অনভিজ্ঞ প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক আমাদের সময়কে বলেন, এ প্রতিষ্ঠানটি অনেকটা নিজেদের মতো করেই কাজ করে। কেনাকাটার ক্ষেত্রে আমি বা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে হস্তক্ষেপ বা নির্দেশনা দেওয়া হয় না। তবে আমি মনে করি কেনাকাটার ক্ষেত্রে সরকারি নিয়ম মেনে চলা উচিত। এ ক্ষেত্রে যদি কোনো অনিয়ম হয়ে থাকে তার দায়িত্ব সংশ্লিষ্টদেরই নিতে হবে।

কীভাবে সিএসএমডিতে এত টাকার কাজ পাচ্ছেন জানতে চাইলে জিএস বায়োটেকের স্বত্বাধিকারী সৈকত সাহা আমাদের সময়ের কাছে তার প্রতিষ্ঠানের বয়স বেশি বলে দাবি করেন। তিনি বলেন, এটি নবায়নকৃত ট্রেড লাইসেন্স। তার ট্রেড লাইসেন্সের বয়স ৩ বছর অথবা চার বছর হতে পারে বলে জানান তিনি। সৈকত বলেন, কোভিডকালীন এ প্রতিষ্ঠান সিএমএসডিতে কাজ শুরু করে। এর আগে তিনি নারায়ণগঞ্জের বেসরকারি হাসপাতালে সরবরাহকারীর কাজ করেছেন। অন্য সবার চেয়ে কমদামে পণ্য সরবরাহের কারণেই তাকে সিএমএসডি কর্তৃপক্ষ কাজ দেয়।

সিএমএসডি সূত্রে জানা গেছে, গত ১৯ আগস্ট আরটি-পিসিআর কিট দরপত্র দলিলের স্পেসিফিকেশন প্রকাশিত হয়। সেখানে দরপত্র সেকশনে (আইটিটি-২১.১(১) এ সিই সনদ অথবা ইউএস এফডিএ সনদ অথবা ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের ডব্লুআইটিও-এর সঙ্গে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের এনওসি চাওয়া হয়। সেখানে রোগতত্ত্ব রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট-আইইডিসিআর কর্তৃক আরটি-পিসিআর কিটের ভেলিডেশন/ইভালুয়েশন পরীক্ষার রিপোর্ট প্রদানের বিষয়টি ছিল না। কিন্তু বিগত ২৫ আগস্ট তারিখের যে সংশোধনী দিয়ে পত্র জারি করা হয়, সেখানে উল্লেখিত বিষয়টি সংযুক্ত করা হয়। যা এর আগে কোনো দরপত্রের চাওয়া হয়নি। এর আগে শুধু আন্তর্জাতিক সনদের সঙ্গে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের এনওসি (অনাপত্তিপত্র) চাওয়া হতো।

ইতিপূর্বে আইইডিসিআর ভেলিডেশন/ইভালুয়েশন কখনো করেনি। কারণ ইভালুয়েশন করার জন্য তাদের প্রয়োজনীয় ল্যাব সরঞ্জাম ও জনবল নেই। কিন্তু করোনা শুরুর পর থেকে কয়েক সিন্ডিকেটকে সুবিধা দেওয়ার জন্য আইইডিসিআরের ভেলিডেশন ও ইভালুয়েশন দেওয়ার পদ্ধতি চালু করা হয়। কিন্তু এটা দেওয়ার ক্ষেত্রে আইইডিসিআরের কোনো ল্যাব সরঞ্জাম ও জনবল নেই।

জানা গেছে, লাইসিস বাফার পদ্ধতি ইন্সট্রাকশন এবং সিঙ্গেল টিউব মাল্টিপ্লেস পদ্ধতিতে ভেলিডেশন ও ইভালুয়েশনের জন্য বিভিন্ন কোম্পানি আবেদন করেছে। কিন্তু আইইডিসিআর শুধু সানসিউর বায়োটেক, চায়নাকে ভেলিডেশন ও ইভালুয়েশন সনদ দেয়। অন্য কোনো কোম্পানিকে এ সনদ দেওয়া হয়নি। অর্থাৎ একচেটিয়াভাবে সানসিউর বায়োটেকের কিট কেনার ক্ষেত্রে এ ক্ষেত্রে একটি সিন্ডিকেট কাজ করছে।

আইইডিসিআর সানসিউর বায়োটেককে সেন্সিভিটি ১০০ শতাংশ এবং স্পেসিটিভিটি ১০০ শতাংশ দিয়েছে। কিন্তু সানসিউর বায়োটেক, চায়নার ওয়েবসাইটে এর ইউজার ম্যানুয়ালে দেওয়া আছে সেন্সিভিটি ৯৪ দশমিক ৩৪ শতাংশ এবং স্পেসিটিভিটি ৯৮ দশমিক ৯৬ শতাংশ। তবে সানসিউর বায়োপেকের ইউএস-এফডিএ সনদ নেই। তার আইইডিসিআরের ফল নিয়েও সন্দেহ রয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সিএমএসডির প্যাকেজ নং : কোভিড জিআর-২১০৪-এর দরপত্র দাখিলের দিন ধার্য ছিল গত ১ সেপ্টেম্বর। সেখানে লট নং ১-এ সায়েন্সটেক করপোরেশন, লট নং-২ এ সায়েন্সটেক করপোরেশন এবং লট নং ৩-এ জিএস বায়োটেক, ফতুল্লা, নারায়ণগঞ্জ সর্বনিম্ন দরদাতা হয়েছে। এরা সবাই বর্তমান সিএমএসডি ডিপিএমের (ডিরেক্ট প্রকিউরমেন্ট মেথড) মাধ্যমে সানসিউর বায়োটেক, চায়নার কিট সরবরাহ করে আসছে।

এ প্রসঙ্গ সিএমএসডির পরিচালক আবু হেনা মোরশেদ জামানের সঙ্গে ফোন করে এবং এসএমএস দিয়েও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

কেনাকাটার এ অনিয়মের বিষয়ে প্রশ্ন করলে প্রতিষ্ঠানটির উপপরিচালক ক্রয় (ডিডি পিসি) ডা. নিজাম উদ্দিন আমাদের সময়কে বলেন, জিএস বায়োটেক কাজ পেয়েছে এটা তিনি জানেন। তবে কোন অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে কাজ পেয়েছে সেটা কাগজপত্র না দেখে তিনি বলতে পারছেন না।

প্রসঙ্গত, দেশে বেশিরভাগ ল্যাবরেটরিতেই করোনা পরীক্ষায় চীনের সানসিউর বায়োটেক কোম্পানির কিট ব্যবহার করা হচ্ছে। বর্তমান বাজারমূল্যে প্রতি সেট কিট ৩-৪ ডলার হিসাবে (প্রতি ডলার ৮৫ টাকা) এ কিটের দাম পড়ে আড়াইশ থেকে সাড়ে ৩০০ টাকা। এর সঙ্গে ভ্যাট, বিমানভাড়া ও আনুষঙ্গিক অন্যান্য ব্যয় যোগ হবে।

করোনার শুরুতে মার্চ থেকে মে পর্যন্ত এসব কিটের দাম কিছুটা বেশি ছিল। তখন কিটের সংকট থাকায় ও পরিবহন খরচও বেশি পড়ার কারণে প্রতি সেট কিট আনতে সরবরাহকারীদের ব্যয় হতো সর্বোচ্চ এক হাজার টাকা। তবে তখন সিএমএসডি এসব কিট কিনে নিত ২৭০০ টাকায়। তখনো সেটপ্রতি সরকারকে বেশি গুনতে হয়েছে এক হাজার ৭০০ টাকা।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877